ছোটগল্প
এক বণিক ব্যবসা বাণিজ্য করার জন্য আরবদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন। অনেকদিন পর তিনি ব্যবসার কাজ শেষ করে, বাড়ি ফিরছিলেন। অনেকদিন পরে বাড়ি যাচ্ছেন, ছেলেমেয়েদের জন্য ফল-মূল থেকে শুরু করে কতকিছুই না তিনি কিনলেন। আদরের সন্তানদের জন্য স্নেহময় পিতা কী কী নিতে পারে সবটাই নিয়ে রওনা দিলেন বাড়ির উদ্দেশ্য। পথিমধ্যে ছিল এক মরুভূমি। হাতে ভারী জিনিস, সাথে আছে নিজের জিনিসপত্র, সবমিলিয়ে একটু বোঝা ছিল।
হাঁটতে হাঁটতে, কাছাকাছি চলে আসলেন সেই শুষ্ক দয়াহীন ছায়াহীন মরুভূমির নিকটে। এই মরুভূমিতে তাঁহার কত শত বার যাতায়াত বলাবাহুল্য। মরুভূমির পথের শুরুতেই বসা থাকা অবস্থায় দেখলেন এক বৃদ্ধকে। বৃদ্ধ লোকটি বণিককে মরুভূমির দিকে যেতে দেখে ইশারায় থামতে বললেন। হঠাৎ আচমকা কেউ এভাবে অপরিচিত জায়গায় থামতে বললে যেমনটা লাগার কথা বণিকের তেমন কিছুই মনে হলো না।তিনি থামলেন, বৃদ্ধ এসে জিজ্ঞেস করলেন কোথায় যাচ্ছেন?, উত্তরে বললেন "বাড়ি যাবো।" তখন বৃদ্ধ বললেন এই মরুভূমি দিয়ে গত তিন মাসে যাতায়াত করেন নাই মনে হয়? পায়ে কিছু দেখছি না।
বৃদ্ধার এমন কথায় হঠাৎ বণিক চিন্তায় পড়ে গেলেন।পায়ে আবার কি থাকবে!
তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, পায়ে কি থাকবে বা হঠাৎ এমন প্রশ্ন বুঝতে পারছি না কিছু। তখন বৃদ্ধ বললেন এ মরুভূমির বালি এখন আগের মতো নাই, এখন বেশি উত্তপ্ত হয়, আপনি যে জুতা পায়ে দিয়েছেন তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া সম্ভব হবে না। বণিক ত একথা শুনে চিন্তাই পড়ে গেলেন। এতদিন এ পথে যাতায়াত কই এমন ত কোনদিন মনে হয়নি। হঠাৎ কোন এক বৃদ্ধ উড়ে এসে বলে দিচ্ছে মরুভূমির উত্তপ্ততা বেড়ে গেছে।
এটা কিভাবে হতে পারে!
তখন বণিক বৃদ্ধকে বললেন, সমস্যা নাই। আমি এ পথে নিয়মিত যাতায়াত করি, এ জুতা নিয়ে যাতায়াত করি, কোন সমস্যা হয়নি। বৃদ্ধ বললেন, বললাম ত জনাব, আগের অবস্থা এখন নেই। বণিক তার কথায় কান না দিয়ে, ছুটে চললেন নিজ গন্তব্যে।
মরুভূমির পথে হাঁটা শুরু। দেখলেন সব ত ঠিকই আগের মতো। আশেপাশের পরিবেশ সব তেমন কোনো পরিবর্তন নাই, তাছাড়া ৩ মাসের মধ্যে এত বড় পরিবর্তন হবে কিভাবে!
একথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ অনুভব করলেন গরমের গ্লানি। মনে হচ্ছে আশেপাশে কেউ আগুন দিছে।
সামনে হাঁটতে থাকলেন তিনি। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ খেয়াল করলেন তার পায়ের জুতো প্রায় গলে গেছে, পায়ে গরম অনুভূত হচ্ছে। এভাবে হাঁটতে গিয়ে পায়ের অবস্থা একেবারেই খারাপ হয়ে গেছে ফসকা দেখা যাচ্ছে, কিছু কিছু জায়গায় রক্ত বেরোচ্ছে।
তখন তিনি আফসোস করতে শুরু করলেন বৃদ্ধের কথাটা শুনলে ত আমার ক্ষতি হতো না আজ। শেষ পর্যন্ত অনেক কষ্ট করে বাড়ি পৌঁছালেন। কিন্তু বাড়িতে যেমন অবস্থায় যাওয়ার কথা ঠিক সেভাবে পৌঁছাতে পারলেন না।
লিখা : আহমেদ আরমান
গল্পের নাম : মরুভূমির বণিক
যা শিখলাম :
কিছু উপদেশ মেনে চলা উচিৎ যা শুনলে লাভ না হলেও অন্তত ক্ষতি ত হবে না বলে মনে হয়। এতে শেষে আমাদেরই কল্যাণ নিহিত থাকে ।
কমেন্ট